রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:১৫ অপরাহ্ন
কালের খবর প্রতিবেদক : বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু সীমান্তে উত্তেজনা বাড়ছে। বাংলাদেশ–মিয়ানমার শূন্যরেখায় মিয়ানমার সেনাদের মাইকিং ও রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশের চেষ্টার খবরে সীমান্তের তুমব্রু পয়েন্টে টহল ও পাহারা জোরদার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।অতিরিক্ত সেনাসদস্য নিয়োগ করা হয়েছে সীমান্ত এলাকায়।
শুক্রবার সকাল থেকেই কিছুটা সরে গিয়েছে মিয়ানমার সেনাসদস্যরা।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সরওয়ার কামাল বলেন, ‘সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার ট্রাক–পিকআপে করে অতিরিক্ত সীমান্তরক্ষী বাহিনী জড়ো করেছে মিয়ানমার। সীমান্তের কোনাপাড়া নো ম্যানস ল্যান্ডে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ভয়–ভীতি দেখানো হচ্ছে। তবে আশঙ্কার কিছু নেই। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সীমান্তে নিরাপত্তা বাড়িয়েছে বিজিবি এবং প্রশাসন।’
বিজিবির বান্দরবান সেক্টর কমান্ডার কর্নেল আবদুল খালেক বলেন, ‘মিয়ানমার সীমান্ত এলাকায় প্রায় সময়ই সীমান্তরক্ষী বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্যসংখ্যা থাকে। আবার পরবর্তী সময়ে সরিয়ে নেয়। কিন্তু হঠাৎ করে তুমব্রু সীমান্তে কেন অতিরিক্ত নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে, বুঝতে পারছি না। কিন্তু সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায়ও বিজিবি নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করেছে।’
গতকাল বৃহস্পতিবার সীমান্তে নতুন করে সেনা সমাবেশ করে মিয়ানমার। তারা মাইকিংয়ের মাধ্যমে শূন্যরেখায় অবস্থান নেওয়া রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের দিকে সরে আসার জন্য হুমকি দিতে থাকে। ভারী অস্ত্রশস্ত্র মোতায়েন করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী।
শূন্যরেখায় আশ্রয় নেওয়া কোনাপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নেতা নূর হোসেন বলেন, বৃহস্পতিবার রাতের বেলায় কয়েক দফায় মাইকিং করে রোহিঙ্গাদের নো ম্যানস ল্যান্ড ছাড়তে বলেছে মিয়ানমারের পুলিশ। মদের বোতল ছুড়ে মেরেছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। আতঙ্কে রাতে ঘুমাতে পারেননি রোহিঙ্গারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিজিবির দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, খবর পেয়ে ফাঁকা গুলির পর পতাকা বৈঠকের জন্য মিয়ানমার সীমান্তরক্ষীদের কাছে চিঠি পাঠানো হলেও কাল পর্যন্ত সাড়া দেননি তারা। পরে আজ বিকেল ৩টায় বৈঠকের জন্য রাজি হয় মিয়ানমার।
পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে আজ বান্দরবানের জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিকের নেতৃত্বে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি প্রতিনিধিদল ঘুমধুমের তুমব্রু পয়েন্টে যাচ্ছে।
পরিদর্শন শেষে তাঁরা ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে এক সভায় জনপ্রতিনিধি এবং স্থানীয়দের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন বলে জানান নাইক্ষ্যংছড়ির নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সরওয়ার কামাল।
গত ২৪ জানুয়ারি বাংলাদেশ–মিয়ানমার যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের মাঠ পর্যায়ের প্রতিনিধিদের এক বৈঠকে শূন্যরেখায় অবস্থান নেওয়া রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে রাজি হয়েছিল মিয়ানমার।
গত বছরের ২৫ আগস্টের পর থেকে অনেক রোহিঙ্গা তুমব্রু সীমান্তবর্তী নো ম্যানস ল্যান্ডে অস্থায়ী ঝুপড়ি তৈরি করে আশ্রয় নেন। পরে সীমান্ত খুলে দিলে তাদের বেশিরভাগই বাংলাদেশে ঢুকে পড়লেও সেখানে রয়ে যান প্রায় ছয় হাজার রোহিঙ্গা।
বাংলাদেশের তরফ থেকে গত মাসে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরুর আশা করা হলেও মিয়ানমারের নানা রকম শর্তের মুখে শুরু করা যায়নি এই প্রক্রিয়া। বর্তমানে রোহিঙ্গাদের পরিবারভিত্তিক তালিকা তৈরির কাজ চলছে। তবে থামছে না রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ। প্রত্যাবাসন চুক্তির পরেও প্রায় ৭০ হাজার রোহিঙ্গা ঢুকেছে।